
আব্দুল্লাহ আল মারুফ নিজস্ব প্রতিবেদক >>> চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কেরানীহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা জিল্লুর বিরুদ্ধে চরম অনিয়ম দূণীতির অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ ভাবে মিটার সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও মিটার বিল দেওযা- নেওয়া, বিল কপি সংশোধনের নামে গ্রাহক হয়রানিসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ কারীরা ওই কর্মকার্তার চরম অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লেখিত অভিযোগ করার পরেও প্রতিকার পাচ্ছে না। তিনি বিগত স্বৈরাচার আমলে যা করে গেছেন এখনো তা বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচ্ছে।তারা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করছে।
সরেজমিন গিয়ে খোঁজনিয়ে জানা গেছে, সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নতুন নতুন সংযোগের জন্য ওয়ারিং ইন্সপেক্টর জিল্লুর রহমানকে প্রতি মিটার নির্দিষ্ট একটা এমাউন্ট না দিলে দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখে নতুন সংযোগের প্রস্তাবনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি বলেন,ওয়ারিং ইন্সপেক্টর জিল্লুর রহমানের,প্রতিটি ইউনিয়নে কিছু নিজস্ব কর্মকর্তা রয়েছে।
তাদের মাধ্যমে প্রতি নতুন সংযোগে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নিয়ে ওখান থেকে একটা এমাউন্ট জিল্লুর রহমানকে দেওয়ার পর দ্রুত নতুন মিটার সংযোগ স্থাপন করে দেন।জিল্লুর রহমান ওয়ারিং ওয়ারিং ইন্সপেক্টর মাঠে গিয়ে তদন্ত করা তার দায়িত্ব।ওয়ারিং রিপোর্টের জন্য মাঠে কখনো তাকে দেখা যায় না।অফিস থেকে কিছুই ইলেকট্রিশিয়ান পাঠিয়ে রিপোর্ট সংগ্রহ করে,ইলেকট্রিশিয়ানকে যাতায়াত বা তদন্ত রিপোর্টের জন্য দিতে হয় এক থেকে দুই হাজার টাকা,সেই টাকা চলে যায় জিল্লুর পকেটে।আর যে নতুন সংযোগে টাকা পাই না,সেটা দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখেন।
স্থানীয় এক সংবাদকর্মী জানান,তার নেতৃত্বে বেশ বেশ কিছু ইলেকট্রিশিয়ান রয়েছে,তাদের মাধ্যমে জিল্লুর রহমান টাকা সংগ্রহ করে। কোন সাধারণ মানুষ নতুন সংযোগের জন্য অফিসে গেলেই, সর্বপ্রথম জিল্লুর সাথে কথা বলতে হবে তারপর শুরু হয় টাকা নেওয়ার কাহিনী।তাদের নির্দিষ্ট কিছু বোর্ড থেকে অনুমোদিত ইলেকট্রিশিয়ান রয়েছে,কোন লোক সার্ভিসের জন্য গেলেই,জিল্লু ওই ইলেকট্রিশিয়ান এর সাথে কথা বলতে বলে,তখন ইলেকট্রিশিয়ানরা একটা নতুন মিটার সংযোগ সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে, ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করে,যেখানে সরকারি ভাবে প্রতি কিলোওয়াট ৪৮০ টাকা ব্যাংক জমার কথা সে খানে নেওয়া হচ্ছে চার থেকে ৫ হাজার টাকা।সেই টাকা থেকেই নির্দিষ্ট একটা এমাউন্ট কিন্তু জিল্লুর রহমান পকেটে যাই।এভাবে যদি প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ তাদের হাতে হয়রানি শিকার হয়। মানুষের আস্তার জায়গা কোথায়।তবে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অনিয়ম নিয়ে আমাদের একটি টিম তথ্য উদঘাটনে কাজ করবে বলেও জানান এই সংবাদ কর্মী।
উপজেলার এওচিয়ার আবু তাহের বলেন,আমি একজন দরিদ্র অসহায় লোক, আমার প্রতি মাসে ৫-৬ শত টাকার উপরে বিল হয় না,এখানে আমাকে বিল করে দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার, টাকা আমার বাসায় ২ টি ফেন ৪ টি বল্প চলে,এত টাকা বিল আসার প্রশ্নই ওঠেনা।
এওচিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড ওয়াহিদার পাড়া এলাকার, শামসুর আলম বলেন আমার পরিবারে আর একটা মিটার প্রয়োজন হওয়ায়। আমি নতুন মিটার সংযোগের জন্য সাতকানিয়া জোনাল অফিসে যাই,এ সময় অফিসের সামনে বসা এক মুরুব্বী ইলেকট্রিশিয়ান এর সাথে যোগাযোগ করলে,তিনি কাগজপত্র দেখে বলেন,এই সংযোগসম্পন্ন করতে,সরকারি খরছসহ সাড়ে তিন হাজার টাকা দিতে হবে। অথচ সরকারি খরছ ৪৮০ টাকা,এরপর যোগাযোগ করলাম অফিসের ডিজিএম'র সাথে,তিনি ওই অফিসের ওয়ারিং ইন্সপেক্টর জিল্লুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন, তারপর তার টেবিলে গেলাম, কাগজপত্র গুলো,ওনি একজন ওয়ারিং পরিদর্শক কে ওয়ারিং রিপোর্ট দিতে কত টাকা খরচ হবে আমাকে জানাতে বলে, তখন ওনি কাগজপত্র দেখে বলেন, ওখানে যাতায়াত খরছ ১ হাজার টাকা দিতে হবে,তখন জিল্লুর রহমান বলে উঠলেন,১ হাজার টাকা তো কমই বলছে,এটা আরো বেশি নেওয়া উচিত ছিল।অর্থাৎ এভাবে জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে সকল তাদের ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে, এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেছে।এভাবে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষ যদি তাদের কাছে জিম্মি হয়ে যায়।মানুষ যাবে কোথায়।
অভিযুক্ত জিল্লুর রহমানের কাছে স্থানীয় সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলে,তিন সাংবাদিক চাঁদাবাজ বলে মব সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন,সাংবাদিকরা কখন কোথায় চাঁদা ছেয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তার সহকারীকে উল্টো সাংবাদিকদের ভিডিও করতে বলেন।পরে তিনি তার অভিযোগের বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এদিকে এলাকাবাসীর দাবি,কেরানীহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চরম অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগের ঘটনায় দীর্ঘদিন থেকে সরকার পরিবর্তন হলো তাদের অনিয়ম পরিবর্তন হয় নাই।এলাকাবাসী প্রশাসনের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে সরজমিন তদন্ত করে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।
এ বিষয়ে সাতকানিয়া জোনাল অফিসের এক কর্মকর্তা জানান,দীর্ঘদিন যাবত,ওয়ারিং ইন্সপেক্টর,জিল্লুর রহমানের অনিয়মেের প্রতিনিয়ত অভিযোগ আসতে থাকে,তাতে অফিসের সুনাম নষ্ট হচ্ছে,আমরা অফিস কর্তপক্ষ তার সকল দুর্নীতি অপকর্মের কারণে অদিষ্ট হয়ে গেছি।
সাতকানিয়া পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,আমাদের অফিসের কোন কর্মকর্তা যদি সরকারি নির্ধারিত ফির বাইরে নতুন সংযোগ বা, মিটার ওয়ারিং পরিদর্শন যাতায়াত খরচ,অথবা অন্যান্য কোন কাজের টাকা দাবি করে,এটা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রবিরোধী আইন বহির্ভূত, আমরা তদন্ত সাপেক্ষে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা,যে কেউ হোক না কেন,তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী দিলীপ চন্দ্র চৌধুরী বলেন,তার বিরুদ্ধে অলরেডি ঢাকা থেকে তদন্ত চলতেছে। অন্যায়কারী যত বড় শক্তিশালী হোক, তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ,অভিযোগ প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।