আইন আদালতটপ নিউজ

শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির মামলার রায় ১৭ নভেম্বর


নিউজ ডেস্ক: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ১৭ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এই মামলায় গত ৮ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয় যুক্তিতর্ক। টানা পাঁচ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। ১৬ অক্টোবর প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক শেষ হলে ২০ অক্টোবর থেকে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী টানা তিন দিন শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ অক্টোবর পাল্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন উভয়পক্ষ। তার আগে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান ট্রাইব্যুনালে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।

সেদিন মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বিচার যত কঠিনই হোক, যত বাধা আসুক; সমস্ত বাধার প্রাচীর ভেঙে যদি বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হয়, তা হলে আমরা জাতি হিসেবে আগামী দিনে এগোতে পারব না। চূড়ান্ত যুক্তিতর্কে চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে। অন্যদিকে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন দাবি করেন, তাঁর মক্কেলরা নির্দোষ, তাঁরা রায়ে খালাস পাবেন।’

এদিকে রায়ের তারিখ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এদিন রাজধানীতে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর পর গত ৯ অক্টোবর সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সুপ্রিমকোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল ও আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। গতকাল এসব এলাকায় বাড়তি পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি ছাড়াও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।

গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। এর পর চলতি বছরের ২৫ মে থেকে ৮ অক্টোবরের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে যেসব মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা আটটি মামলা। এর মধ্যে পাঁচটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারাধীন পাঁচটি মামলার মধ্যে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে এই মামলাটিই রায় ঘোষণার পর্যায়ে এসেছে সবার আগে।

গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই অভ্যুত্থানে পতিত সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে দাবি করে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয়, এই অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করা হবে। সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল গত বছরের ১৭ অক্টোবর দুই মামলার বিষয়ে প্রথম শুনানি হয়। সেদিন প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

এর আগে গত বছরের ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। অন্য দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ১২ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে আত্মসমর্পণ করতে ১৬ জুন সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরদিন সেই বিজ্ঞপ্তি দুটি জাতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়।

এর পর আত্মসমর্পণ না করায় তাঁদের পলাতক দেখিয়ে গত ১০ জুলাই মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই দিন আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এ মামলার রাজসাক্ষী হতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন। পরে তাঁর আবেদন মঞ্জুর করা হয়। গত ৩ আগস্ট চিফ প্রসিকিউটরের সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে দিয়ে শুরু হয় বিচারকাজ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সাক্ষ্য দেন এ মামলায়। রাজসাক্ষী হিসেবে গত ২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দেন আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন।

 


Related posts

সড়ক-ফুটপাতে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম কমছে না

Chatgarsangbad.net

চট্টগ্রাম জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি জাহেদুল ইসলাম

Md Maruf

টিসিবির পণ্য অবৈধ মজুদ, লাখ টাকা দণ্ড

Chatgarsangbad.net

Leave a Comment