সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল: চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও’এ ২০১৯ সালে এনজিও কর্মকর্তা কর্তৃক গৃহকর্মী শিশু রহিমাকে (১৪) গৃহে আটক রেখে ধর্ষন মামলাসহ সকল শিশু ও নারী নির্যাতন মামলার দ্রুত ন্যায় বিচার দাবী করেছে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চট্টগ্রামে কর্মরত বেসরকারি সেবা ও উন্নয়ন সংস্থাসমুহ। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চট্টগ্রামে কর্মরত সংস্থাসমূহের শুরু থেকে চট্টগ্রামে শিশুর অধিকার সুরক্ষা, শিশু ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ, শিশু শিক্ষা এবং শিশু উন্নয়ন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সমাজ উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।
৩১ মে শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এস রহমান হলে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চট্টগ্রামে কর্মরত সংস্থাসমূহের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে শিশু গৃহকর্মী রহিমা ধর্ষণ মামলাসহ সকল নারী ও শিশু বিশেষ করে গৃহকর্মী শিশুদের অধিকার নিশ্চিত ও নির্যাতন প্রতিরোধে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের দাবী জানানো হয়।
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় এক করুণ ঘটনার শিকার হয় ১৪ বছর বয়সী গৃহকর্মী শিশু রহিমা আক্তারকে মো. মাহাবুবর রহমান নামে একজন এনজিও কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ২২ জুলাই গৃহে আটক রেখে ধর্ষণ করেন। সমাজসেবা অধিদপ্তরের জাতীয় চাইল্ড হটলাইন ১০৯৮-এ কল পেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা চান্দগাঁও থানার পুলিশের সহযোগিতায় রহিমাকে আসামীর তালাবদ্ধ গৃহ থেকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে, ২৩ জুলাই ২০১৯-এ রহিমার মা বিবি জহুরা চান্দগাঁও থানায় ধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৪২/২০১৯)। বর্তমানে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ -এ (মামলা নং ৭২/২০২০) চলছে এবং সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু আসামী প্রভাবশালী হওয়ায় মামলাটিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের গভীর উদ্বেগের বিষয় হলো, মামলার অভিযুক্তরা বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে, ভুক্তভোগী পরিবারের উপর ভয়ভীতি সৃষ্টির মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
এ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সিভিল সোসাইটি, সাংবাদিক, শিক্ষক, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন এবং শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।
বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল-কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এ কে এম নাজিম উদ্দিন জানান – “শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট আইন অনুযায়ী বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা গেলেই বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। শিশু রহিমার ধর্ষণ মামলার ন্যায় বিচার নিশ্চিত হলে অন্য অপরাধীরা ভয় পাবে।”
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং যুগান্তর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইয়াছমিন পরভিন বলেন, একজন উন্নয়নকর্মীর মানুষের কাছ থেকে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা সকল উন্নয়নকর্মীর জন্য লজ্জার। তাই এ ধরনের মামলার দ্রুত বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে আর অন্য কোন অপরাধীর সাহস না হয় এমন অপরাধ করার।
শিশু- যুব অধিকার কর্মী ও যুব সংগঠক এসডিজি ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি এবং চন্দনাইশ ছাত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা নোমান উল্লাহ বাহার বলেন, শিশুদের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত সকলের দায়িত্ব এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি চাওয়া। ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিশু নির্যাতন কখনো কাম্য নয়। শিশু রহিমার ধর্ষণ মামলার ন্যায়বিচার সময়ের দাবী।
ব্র্যাকের বিডিসি এনামুল হাছান বলেন, শিশু অধিকার রক্ষায় আমাদের কাজ করতে হবে। যেখানে শিশুর অধিকার লঙ্ঘিত হবে, শিশু নির্যাতনের শিকার হবে সেখানে আমরা প্রতিবাদ করবো। গৃহকর্মী শিশু রহিমা ধর্ষণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য আমাদের এই আন্দোলন।
সংবাদ সম্মেলনে শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে চট্টগ্রামে কর্মরত এনজিও সমূহের সমন্বয়কারী মাহাবুব-উল-আলমের পরিচালনায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন অপরাজেয় বাংলাদেশ- চট্টগ্রামের প্রধান জিনাত আরা বেগম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শ্রমিক নেতা এ কে এম নাজিম উদ্দিন, এনজিও ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, নোমান উল্লাহ বাহার, ইয়াছমিন পারভীন এবং মাহাবুব-উল-আলম ও সংগঠক জান্নাতুল ফেরদৌস রিকু প্রমুখ।
Leave a Reply