সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল: পৃথিবী জুড়ে পালন করা দিবসসমুহের মধ্যে একটি হল- বিশ্ব রেঞ্জার দিবস (World Ranger Day)। যা প্রতি বছর ৩১ জুলাই পালন করা হয়। তবে দিবসের কর্মসূচি পালিত হয় বেসরকারিভাবে। এবারের (২০২৫ সালের) দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- "আমাদের গল্প: আমাদের আন্দোলনের প্রতীক ও মূল্যবোধের প্রতিফলন"।
বিশ্ব রেঞ্জার দিবস, ইন্টারন্যাশনাল রেঞ্জার ফেডারেশন (IRF) দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রেঞ্জাররা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন, যেমন– আইন প্রয়োগ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, শিক্ষামূলক কার্যক্রম, এবং পর্যটকদের জন্য পরিষেবা প্রদান। এই দিনটি রেঞ্জারদের কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এবং তাদের সুরক্ষার জন্য কাজ করে।
সংক্ষেপে, বিশ্ব রেঞ্জার দিবস হল রেঞ্জারদের আত্মত্যাগ এবং তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ একটি বিশেষ দিন। কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বা আহত রেঞ্জারদের স্মরণে এবং গ্রহের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় তাদের কাজ উদযাপন করা হয় দিবসটিতে। দিনটি বিশ্বব্যাপী রেঞ্জারদের কাজ উদযাপন এবং তাঁদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানানোর জন্য পালিত হয়। এই দিনটি মূলত রেঞ্জারদের কাজ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাঁদের সুরক্ষার জন্য কাজ করে।
আইআরএফ হল আন্তর্জাতিক রেঞ্জার ফেডারেশন। এই সংস্থাটি ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যখন SCRA (স্কটিশ কান্ট্রিসাইড রেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন), ANPR (মার্কিন অ্যাসোসিয়েশন অফ ন্যাশনাল পার্ক রেঞ্জার্স) এবং CMA (কান্ট্রিসাইড ম্যানেজমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, যা ওয়েলস এবং ইংল্যান্ডের রেঞ্জার্সদের প্রতিনিধিত্ব করে) একটি যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। রেঞ্জার্সই প্রথম যারা বিশ্বজুড়ে আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার জন্য লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছিল। তাই তাদের সম্মান জানাতে এবং তাদের কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারানো রেঞ্জারদের শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ব রেঞ্জার দিবস পালন করা হয়। আইআরএফের লক্ষ্য ছিল বিশ্বব্যাপী রেঞ্জারদের প্রচেষ্টা সমর্থন করা এবং তাদের কাজের স্বীকৃতি দেওয়া। প্রথম বিশ্ব রেঞ্জার দিবসটি পালন করা হয়েছিল ২০০৭ সালে, কঙ্গোর ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকে Virunga National Park এ কর্মরত আটজন রেঞ্জারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, যারা কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হয়েছিলেন। দিবসটি রেঞ্জারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং তাঁদের মুখোমুখি হওয়া ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করে।
"রেঞ্জার" শব্দটি বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়, তবে সাধারণভাবে এর অর্থ হল কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকা দেখাশোনা বা সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি। এটি সামরিক বাহিনী, পার্ক বা বন বিভাগ, অথবা ফাইল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে। পার্ক রেঞ্জারের কাজ হল পার্ক বা প্রাকৃতিক এলাকার সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা, নিয়মকানুন প্রয়োগ করা এবং দর্শকদের তথ্য সরবরাহ করা। ফরেস্ট রেঞ্জারের কাজ এরা বনাঞ্চলে টহল দেয়, আগুনের ঝুঁকি পর্যবেক্ষণ করে এবং নিয়মকানুন প্রয়োগ করে। আর্মি রেঞ্জার হল মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি এলিট ইউনিট, যারা বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে।
এই দিবস তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি বন, প্রাকৃতিক উদ্যান এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়া বিষয়ে সজাগ ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
প্রতি বছর ৩১ জুলাই বিশ্ব রেঞ্জার দিবস পালিত হয় কর্তব্যরত অবস্থায় আহত বা নিহত রেঞ্জারদের স্মরণে। এই বিশ্ব রেঞ্জার দিবস বিশ্বজুড়ে রেঞ্জাররা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার জন্য যে সমস্ত কাজ করে তা উদযাপন করে। বিশ্ব রেঞ্জার দিবস উদযাপন করার এবং এতে জড়িত হওয়ার অনেক উপায় রয়েছে। বিশ্ব রেঞ্জার দিবসে বিশ্বের রেঞ্জারদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি উপায় হল রেঞ্জারদের করা সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা।
বিভিন্ন দেশের রেঞ্জাররা এই দিনটিতে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করে, যেমন - র্যালী, আলোচনা সভা, এবং জনসচেতনতামূলক প্রচার, প্রচারপত্র বিলি ইত্যাদি।
চট্টগ্রামের শহর ফরেস্ট রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা (রেঞ্জ কর্মকর্তা) মো. মনোয়ার হোসেন এবং চন্দনাইশের দোহাজারী রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (রেঞ্জ কর্মকর্তা) এ কে এম ইমরুল কয়েস বলেন, দিবসটি ফরেস্ট রিলেটেড হলেও আমাদের দেশে সরকারিভাবে পালিত দিবস নয়। পালনের জন্য উর্ধতনের কোন নির্দেশনা বা নোটিশ পাইনি। তবে, কেউ বা কোন প্রতিষ্ঠান আয়োজন করলে বা আমাদের দাওয়াত দিলে আমরা অংশ নিতে পারি।
সফল হোক বিশ্ব রেঞ্জার দিবস। জীবন বৈচিত্র সংরক্ষিত থাকুক। নিরাপদ হোক রেঞ্জারজীবন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা হোক।
লেখক (সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল): সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক