আহসান উদ্দিন পারভেজ: চট্টগ্রাম বন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদ বিদেশী কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার এক্তিয়ার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নেই।
জাতীয় নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় যে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র টার্মিনাল পরিচালনা করতে দেয়নি, সেই ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতেই অন্তর্বর্তী সরকার কোন বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লাভজনক নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার তুলে দিতে চাইছে,তার জবাব দিতে হবে।” আজ নগরীর পুরাতন স্টেশনে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বাম গনতান্ত্রিক জোটের নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার প্রতিবাদে ও কথিত মানবিক করিডোরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত বন্ধ, কাতারকে সামরিক সরঞ্জাম তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অনুমতি না দেয়ার দাবিতে আজ ১৫ মে,বিকাল ৪ টায় চট্টগ্রাম পুরাতন রেল স্টেশন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা।
বাম গনতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা নেতা সিপিবি জেলা সভাপতি কমরেড অশোক সাহার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ ( মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির আবিদ,সিপিবি জেলা সহসম্পাদক নুরুচ্ছফা ভুঁইয়া,বাসদ জেলা কমিটির সদস্য মহিন উদ্দিন।সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ( মার্কসবাদী) জেলা নেতা জাহেদুন্নবী কনক।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন,“চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ও অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত লাভজনক নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থবিরোধী। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল তৈরি হয়েছে দেশীয় অর্থায়নে, দুই হাজার কোটি টাকায় অত্যাধুনিক গ্র্যান্টি ক্রেনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে।দেশের টাকায় সমস্ত কিছু করে এখন বিদেশীদের হাতে টার্মিনালটি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত রহস্যজনক ও চক্রান্তমূলক। বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করে,গত আওয়ামীলীগ সরকার টার্মিনালটি আরব-আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সে সিদ্ধান্ত বাতিল না করে আওয়ামীলীগ সরকারেরই পদান্ক অনুসরণ করছে।চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। দেশের আমদানি রপ্তানির সিংহভাগ এর উপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে দেশের নৌঘাঁটি,বিমানঘাঁটি সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার অবস্থান। এরকম একটি স্থানে একটি বিদেশী কোম্পানিকে টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া ভবিষ্যতে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্যও হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এটাই ছিল জনগণের প্রত্যাশা। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় না গিয়ে অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকারের মতোই স্বেচ্ছাচারী উপায়ে এক্তিয়ার বহির্ভূত সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যা গণঅভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থী।” নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে ইজারা দেওয়ার চক্রান্ত প্রতিহতের জন্য দেশবাসীকে আহবান জানান।
নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনো আলোচনা ছাড়া আরাকানে কথিত মানবিক করিডোর প্রদানের তৎপরতার সমালোচনা করে বলেন,“আরাকানে মানবিক করিডর দেওয়ার সিদ্ধান্ত একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ ধরনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা,সামরিক ঝুঁকি, সার্বভৌমত্ব,ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অবস্থান যুক্ত এবং এর সাথে যুক্ত প্রতিটি বিষয় গভীর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে ঐকমত্য ছাড়া এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকার একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।”
নেতৃবৃন্দ কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির খাতে বিনিয়োগ করতে সরকারের আহবান জানানোর নিন্দা জানান। এ বিষয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, “সরকারের এ ধরনের ব্যবসায়ী উদ্যোগ বাংলাদেশকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলবে। বিদেশি কোনো দেশের সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানা বাংলাদেশে হতে পারে না।”
সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে আটক বামজোট জেলা সমন্বয়ক বাসদ নেতা আলকাদেরি জয়, ছাত্রনেতা মিরাজউদ্দিন,শ্রমিকনেতা রোকনউদ্দিনের মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশী দমন-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।
সমাবেশ শেষে নগরীর পুরাতন স্টেশন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে নিউমার্কেট মোড়ে এসে শেষ হয়।
Leave a Reply