পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে ভারতের রপ্তানিকারকরা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরেই স্থবির ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বাজার। স্থানীয় বাজারে পেয়াঁজের দাম সর্বনিম্নে নেমে এলেও কেন রপ্তানি থমকে আছে, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ও চীনের মতো বাংলাদেশও এখন স্বনির্ভরতার পথে হাঁটছে, পাশাপাশি বিকল্প বাজার থেকে আমদানির প্রবণতা বেড়েছে—এসব কারণেই ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

একসময় বাংলাদেশের আমদানির এক-তৃতীয়াংশই ছিল ভারতীয় পেঁয়াজ। কিন্তু গত আট মাসে ভারত থেকে খুব সামান্য পেঁয়াজ আমদানি করেছে ঢাকা, যদিও বাংলাদেশে দাম তিনগুণ বেশি। সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে খুব কম পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছে। বিশেষজ্ঞদের মত, ভারতের ঘন ঘন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা—এটাই বাজার হারানোর মূল কারণ।

রপ্তানিকারকদের দাবি আরও একধাপ এগিয়ে—ভারতীয় পেঁয়াজের বীজ অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে যাওয়ায় তারা এখন নিজেরাই উৎপাদন বাড়িয়ে ফেলেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের একচ্ছত্র আধিপত্য কমে গেছে।

ভারতের হর্টিকালচার প্রোডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান অজিত শাহ বলেন, “গুণমান ভালো হওয়ায় আগে অতিরিক্ত দাম নিতে পারতাম। কিন্তু দীর্ঘদিন বাজারে না থাকায় ক্রেতারা বিকল্প খুঁজে নিয়েছেন। এখন কেউ মান দেখে নয়—দাম দেখে বাজার নির্ধারণ করছে।”

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এর আগেও ২০১৯ ও ২০২০ সালে দুই দফায় মাসের পর মাস রপ্তানি বন্ধ ছিল। এসব সিদ্ধান্তে ভারতীয় পেঁয়াজনির্ভর দেশগুলোতে দাম হু-হু করে বাড়ে। ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ২০২০ সালে কূটনৈতিক বার্তাও পাঠিয়েছিল দিল্লিকে।

বর্তমানে বাংলাদেশ স্থানীয় কৃষকদের সুরক্ষা ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে না। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৭.২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছিল ভারত, যা তাদের মোট রপ্তানির ৪২ শতাংশ। কিন্তু ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে সেই পরিমাণ নেমে আসে মাত্র ১২ হাজার ৯০০ টনে। ভারতের ধারণা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে অনীহা তৈরি করেছে।

তবে রপ্তানিকারকদের মতে, ঐতিহ্যবাহী বাজার হারানোর মূল কারণ সরকারের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন। মহারাষ্ট্র সরকারের পেঁয়াজ নীতি কমিটির প্রধান পাশা প্যাটেল বলেন, “ভারতীয় বীজ ব্যবহার করে অনেক দেশ নিজেরাই স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। ফলে আমদানির প্রয়োজন কমছে।”

সৌদি আরবও প্রায় এক বছর ধরে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র দিচ্ছে না। তাদের বাজারে এখন প্রতিযোগিতামূলক দামে ইয়েমেন, ইরানসহ অন্যান্য দেশের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় উৎপাদনও বেড়ে গেছে।

একসময় সৌদি আরবে বছরে ৫৭ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানি করত ভারত। এখন সেই পরিমাণ কমতে কমতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২২৩ টনে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিক টাইমস


Related posts

গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলা, নিহত ২০৫

Chatgarsangbad.net

বিসিবির প্রথম নারী পরিচালক হলেন যিনি

Ariyan Chowdhury

কান উৎসব উদ্বোধনের লাল গালিচায় মেরিল স্ট্রিপ

Chatgarsangbad.net

Leave a Comment