জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া যাচাই না করেই স্বাক্ষর করে বিএনপি ভুল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, এনসিপি এখনো সনদে সই করেনি, কারণ দলটি এর আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হতে চায়।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নাসীরুদ্দীন বলেন, “বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া না দেখে জুলাই সনদে সাইন করে বিএনপি ভুল করেছে। এখন অন্যের ওপর দোষ না চাপিয়ে নিজেদের ভুলের কাফফারা দেওয়া উচিত। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যখন জুলাই সনদের খসড়া দেওয়া হবে, তা দেখেই আমরা সই করার সিদ্ধান্ত নেব।”

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ‘গণভোট আগে না নির্বাচনের সঙ্গে হবে’—এই বিতর্ককে “মল্লযুদ্ধ” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “এমন তর্ক-বিতর্ক করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন রোধ করা যাবে না। যারা এই বিতর্ক তৈরি করছে, তারা আসলে ফ্যাসিবাদকে ফিরিয়ে আনতে চায়।”

তিনি আরও বলেন, “গণভোট যে কোনো সময়েই হতে পারে, এনসিপি তাতে শুভকামনা জানাবে। তবে তা অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় হতে হবে।”

নাসীরুদ্দীন বলেন, “গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সইয়ে একটি আদেশ জারি করতে হবে, যার অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। টাইম ফ্রেম নিয়ে আমরা কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান নিচ্ছি না।”

তিনি জানান, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকায় এনসিপি এখনো এতে স্বাক্ষর করেনি। “আমরা বারবার বলেছি, জুলাই সনদ শুধুই রাজনৈতিক সমঝোতা নয়; এর আইনি ভিত্তি থাকা জরুরি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া দেখেই আমরা সই করব,” বলেন তিনি।

নাসীরুদ্দীনের দাবি, এনসিপির “আপসহীন অবস্থান”-এর কারণেই ঐকমত্য কমিশন সম্প্রতি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা সরকারের কাছে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা ঐকমত্য কমিশনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”

বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, “বিএনপি ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের গদি দিনে নড়াত, রাতে ঠিক করে দিত। আমরা আওয়ামী লীগের গদি দিনেও নেড়েছি, রাতেও নেড়েছি।”

ঐকমত্য কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এতদিন এটা ছিল সালাহউদ্দিন কমিশন, এখন ঐকমত্য কমিশন তার মেরুদণ্ড ফিরে পেয়েছে। সালাহউদ্দিন কমিশন দেশকে ভুল পথে নিতে চেয়েছিল, এনসিপি সেটিকে সঠিক পথে এনেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক সরকারের প্রতি তিন দফা দাবি জানান—
১. ঐকমত্য কমিশন প্রস্তাবিত জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রথম খসড়া গ্রহণ করে সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া প্রণয়ন ও প্রকাশ করতে হবে।
৩. জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসম্পন্ন খসড়া সরকার গ্রহণ করলে এনসিপি সনদ স্বাক্ষরে অগ্রসর হবে।

শেষে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যদি সাহস থাকে, তাহলে আমাদের শাপলা ছাড়া প্রতীক দিক—দেখি তাদের কত জোর।”