
কক্সবাজার : জীবনের আনন্দ ও শোক কখনও কখনও একই সঙ্গে আঘাত হানে—আর তার নির্মম উদাহরণ হয়ে রইল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাঁইশারী ইউনিয়নের একটি পরিবারের রাত। গত রোববার (১৬ নভেম্বর) একই সময়ে তাঁদের ঘরে এল নতুন জীবন, আর চলে গেলেন পরিবারপ্রধান শাহজাহান (৩২)।
করলিয়ামুরা এলাকার রাবার বাগানের শ্রমিক শাহজাহান রাতে খাবারের পর ভুলবশত পানির বদলে অ্যাসিড পান করেন—এমনটাই জানিয়েছেন তাঁর পরিবার। অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে প্রথমে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়, পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কয়েক ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত পৃথিবী ছেড়ে যান তিনি।
তবে পরিবার ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ, এটি হয়তো দুর্ঘটনা নয়। পূর্ববিরোধের জেরে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর পানিতে অ্যাসিড মিশিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। ঘটনাটি তদন্তের দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।
এদিকে শাহজাহান যখন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর মাঝে ঝুলছিলেন, তখন ঈদগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসববেদনায় কাতরাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী—স্বামীর সংকট সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। রাত ৩টার দিকে বি-পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হলে ঈদগাঁও ব্লাড ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবীরা দ্রুত এগিয়ে আসেন। ডোনার আকিল ও গিয়াস উদ্দিন রাতে ছুটে গিয়ে রক্ত দিয়ে প্রসূতির চিকিৎসা সহজ করেন। চিকিৎসক ডা. তৃণা শাহা ও কর্মী মফিজুর রহমান রাতভর অব্যাহত সেবা দেন।
শেষরাতে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তান। হাসপাতালের এক পাশে নবজাতকের আগমনে উচ্ছ্বাস, আর কয়েক কিলোমিটার দূরে কক্সবাজার হাসপাতালে নেমে আসে মৃত্যু সংবাদ—একই রাত, সম্পূর্ণ বিপরীত দুই অনুভূতি।
সবচেয়ে বেদনাদায়ক, সন্তান জন্মের মুহূর্তেও মা জানতেন না—যাঁর কোল আলো করে নতুন জীবন এসেছে, তিনি আর ফিরে আসবেন না।
স্থানীয়দের ভাষায়, “একদিকে নবজাতকের কান্না, অন্যদিকে শাহজাহানের মৃত্যু—এর চেয়ে হৃদয়বিদারক মুহূর্ত ভাবা কঠিন।”
শাহজাহানের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে স্থানীয়রা দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
চাটগাঁর সংবাদ/বাংলাদেশের খবর/ চট্টগ্রামের খবর/ কক্সবাজার জেলার খবর
