সাঈদুর রহমান চৌধুরী: ‘সর্বকালেই পরিমাপ সকলের জন্য’ প্রতিপাদ্যে চটগ্রামে বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস-২০২৫ উপলক্ষ্যে বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের উপপরিচালক ও অফিস প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।
এসময় তিনি বিশ্ব মেট্রোলজি দিবসের তাৎপর্য ও বিএসটিআই’র কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, এবারের প্রতিপাদ্যটি পরিমাপের নির্ভুলতা নিশ্চিতকরণ ও টেকসই উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিএসটিআই “ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইন- ২০১৮” অনুযায়ী মেট্রিক পদ্ধতি বাস্তবায়ন, ওজন ও পরিমাপ যন্ত্রপাতির ভেরিফিকেশন/ক্যালিব্রেশন এবং মোড়কজাত পণ্যের সঠিক ওজন নিশ্চিতকরণসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। শিল্পায়ন ও রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য বিএসটিআই চট্টগ্রাম অফিস সম্প্রসারণ, আধুনিকীকরণ ও নতুন ল্যাব স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষণ ও ক্যালিব্রেশন সেবা নিশ্চিত করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনভিত্তিক QR Code, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সকলের সহযোগিতার মাধ্যমে বিএসটিআই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সচেষ্ট।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়া উদ্দীন।
এসময় তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন,ওজন ও পরিমাপ নিয়ে সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ সমস্যা আরও প্রকট। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মেট্রিক পদ্ধতি ব্যতীত ভিন্ন ভিন্ন এককে ওজন পরিমাপ করায় পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে শুধু বিভ্রান্তিরই সৃষ্টি হয় না বরং প্রতারণারও সুযোগ তৈরি হয়।
বাংলাদেশে একজন সৎ ব্যবসায়ীকেই বরং সমস্যায় পড়তে হয়, কারণ অসৎ পথে যারা চলে তারা নিয়ম ভাঙার সুযোগ সুবিধা নিয়ে ফেলে। তাই ওজন ও পরিমাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের সকলকেই সচেতন হতে হবে — শুধু ব্যবসায়ী বা উৎপাদক নয়, ভোক্তারাও এর বাইরে নন।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটির সক্রিয়তা ও কার্যক্রমের ফলে দেশে ওজন ও পরিমাপ সংক্রান্ত অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব হয়েছে। তবে শুধু বিএসটিআই-এর প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়, আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা ও দায়িত্বশীল মনোভাবও জরুরি।
তিনি সবাইকে নিজের জায়গা থেকে অন্যকে ওজনে কম না দেওয়ার এবং অন্যের কাছ থেকে পণ্য সঠিক পরিমাণে বুঝে নেওয়ার আহবান জানান। এই মানসিকতা যদি সবাই গ্রহণ করে, তাহলে স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সবশেষে যারা এ বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন এবং দেশব্যাপী ন্যায্য ব্যবসার পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন তাদেরকে তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম।এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসেন।
এস এম নাজের হোসেন তার বক্তব্যে বলেন,বর্তমানের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও ভোক্তাদের ঠকানোর যে প্রতিযোগিতা চলছে তা রুখে দিতে বিএসটিআইসহ সরকারের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও জেলা প্রশাসনকে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বিএসটিআইকে ভ্রাম্যমাণ ক্যালিব্রেশন ভ্যান ব্যবহার করে বাজারে ওজন ও পরিমাপ যাচাইয়ের আহ্বান জানান।
উক্ত আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্ল্যাহ্, ইউনিলিভার এর প্রতিনিধি মোহাম্মদ রিফাত মাহমুদ, বনফুল এর প্রতিনিধি সুভাষ প্রিয় চাকমা, আব্দুল খায়ের কনজুমারস এর প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর যুগ্ম সম্পাদক সেলিম জাহাঙ্গীর, বিএসআরএম এর মোঃ জুনায়েদ উদ্দিন চৌধুরী,চট্টগ্রাম ড্রিংকিং ওয়াটার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সাল আব্দুল্লাহ প্রমুখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বিএসটিআই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের নানারকম কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেইসাথে নবনির্মিত ভবনে বিভিন্ন পণ্যের পরীক্ষণের জন্য অত্যাধুনিক ল্যাব স্থাপনের ফলে সময় ও অর্থ উভয়েরই সাশ্রয় হবে জানিয়ে বিএসটিআইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তারা।
পরিশেষে উপপরিচালক (মেট্রোলজি) মোহাম্মদ লুৎফর রহমান তাঁর ধন্যবাদ বক্তব্যে মুক্ত আলোচনায় উপস্থাপিত বিভিন্ন প্রসঙ্গের যুক্তি খণ্ডন এবং সভাপতির অনুমতিক্রমে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
Leave a Reply