চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণাসহ ৯ দফা দাবীতে বিজেপির সংবাদ সম্মেলন


সাদ্দাম হোসেন।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), চট্টগ্রাম জেলার
উদ্যোগে জাতীয় নিরাপত্তা,বৃহত্তর চট্টগ্রামের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার(২৬ নভেম্বর)চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হল মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আহবায়ক এস. এম. ইকরাম হোসাইন এবং সঞ্চালনায় করেন সদস্য সচিব এইচ এম তাহির। এই সময় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ জুলকারনাইন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের দাবি সহ ৯ দফা উন্নয়ন ও সংস্কার দাবিপত্র উপস্থাপন করেন।
এই সময় বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ জুলকারনাইন বলেন,ঐতিহাসিক,ভৌগোলিক ও কৌশলগত কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় চট্টগ্রাম সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের শিল্প–বাণিজ্য, আমদানি–রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ৯০ শতাংশ চট্টগ্রাম হয়ে প্রবাহিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে এই অঞ্চল নিয়মিত বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার। ঢাকাকেন্দ্রিক প্রশাসন ও একমুখী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপরিকল্পিত রেখেছে,যা সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। তিনি রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন, বিদেশী বিনিয়োগ, রপ্তানি বৃদ্ধি ও নীল অর্থনীতির প্রসারের স্বার্থে চট্টগ্রামকে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের জোর দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) জেলা আহবায়ক
এস. এম. ইকরাম হোসাইন বলেন,“চট্টগ্রাম বাংলাদেশের হৃদপিণ্ড; পুরো দেশকে মেটাবলিকর-মেটেরিয়ালস সরবরাহ করে এই অঞ্চল। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি উন্নত দেশের বন্দরনগরী বা বাণিজ্যিক রাজধানী তাদের মূল রাজধানীর তুলনায় অধিকতর উন্নত। অথচ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, সুপরিকল্পিত উন্নয়ন এবং ইতিবাচক মনোভাবের অভাবে চট্টগ্রাম আজও বঞ্চনার শিকার।”
১১ নভেম্বর ২০২৫–এ ত্রিপুরা রাজা প্রদ্যুৎ বিক্রম মানিক্য দেববার্মার প্রকাশিত ‘গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড’ মানচিত্রে চট্টগ্রাম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা এবং ২ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দর দখলের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান তিনি। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ না করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন,অতীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আদানি গ্রুপের সাথে স্বার্থবিরোধী পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টের মতো কোনো অস্বচ্ছ বা ক্ষতিকর বৈদেশিক চুক্তি চট্টগ্রামবাসী ও জাতি মেনে নেবে না। চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া ও এনসিটি টার্মিনাল DP World ও APM Terminals-কে দীর্ঘমেয়াদী ইজারা প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রয়োজন, তবে তা হতে হবে নির্দেশিত, নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ এবং জাতীয় স্বার্থ–অক্ষুণ্ণ রেখে। চট্টগ্রামকে কোনোভাবেই বাণিজ্যিক ল্যাবরেটরি হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।”
এই সময় বক্তারা আরো বলেন,সেন্টমার্টিন,বঙ্গোপসাগর এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সাম্প্রতিক ভূ–রাজনৈতিক চাপ ও পরিস্থিতি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগজনক। সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত ৯ দফা দাবি,
১। চট্টগ্রামকে সাংবিধানিকভাবে ‘বাণিজ্যিক রাজধানী’ ঘোষণা করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
২। হাইকোর্ট বেঞ্চ, মন্ত্রণালয়ের আঞ্চলিক দপ্তর ও পূর্ণাঙ্গ সরকারি সংস্থার উপ-অধিদপ্তর চট্টগ্রামে স্থাপন করতে হবে।
৩। চট্টগ্রামের সকল জেলা সংযোগ সড়ক ৬-লেন মানে উন্নীত করতে হবে।
৪। আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য বিশ্ববিদ্যালয়, আইটি পার্ক, উন্নত মেরিটাইম একাডেমি ও বিজনেস ইনোভেশন সেন্টার চট্টগ্রামে স্থাপন করতে হবে।
৫। চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্প আন্তর্জাতিকায়নের লক্ষ্যে বৈশ্বিক বিনিয়োগ রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে।
৬। কর্ণফুলী করিডোর, মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আধুনিকায়নকে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক রপ্তানি বাজারের সাথে যুক্ত করতে হবে।
৭। ত্রিপুরা রাজার ‘গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড’ মানচিত্র প্রকাশের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্ট ও আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক প্রতিবাদ জানাতে হবে।
৮। চট্টগ্রাম বন্দরের DP World ও APM Terminals-এর সাথে যেকোনো চুক্তির নিরাপত্তা, মালিকানা, ক্লজ ও লাভ বণ্টন প্রকাশ্যে আনতে হবে এবং বৈদেশিক চুক্তি অবশ্যই প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার ভিত্তিতে নিশ্চিত করতে হবে।
৯। বৃহত্তর চট্টগ্রামের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য একটি ‘রিজিওনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কমিশন’ গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন
জেলা সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক আলাউদ্দিন তৌফিক, মহানগর সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক জসীম উদ্দীন, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহবায়ক ফজলে রাব্বী, ছাত্রসমাজের আহবায়ক শাহরিয়ার আরিফসহ জেলার নেতৃবৃন্দ।


Related posts

সাংবাদিকদের কাছে কাজের যৌক্তিক সমালোচনা আশা করলেন চসিক মেয়র ডাঃ শাহাদত

Chatgarsangbad.net

চন্দনাইশে সাংবাদিকদের সাথে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মতবিনিময়

Chatgarsangbad.net

করোনা ভাইরাস: চট্টগ্রামে সংক্রমণ বাড়ছে

Chatgarsangbad.net

Leave a Comment