আজ ২৯শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

“ঘুষ না দিলে মামলা!” — কাগজ ঠিক থাকলেও চালককে ১৩ হাজার টাকার ‘শাস্তি’


বিশেষ প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেরানীহাটে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে আবারও ঘুষ দাবির বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও মাত্র এক হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় এক পিকআপ চালকের বিরুদ্ধে ১৩ হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার (২৮ জুলাই) রাত ৮টার দিকে। অভিযুক্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহফুজুর রহমান ও পুলিশ সদস্য মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের অভিযোগ—কেরানীহাট এলাকায় ঘুষ দাবি এখন ‘নিয়মিত ঘটনা’ হয়ে উঠেছে।

“সব কাগজ ঠিক, তবুও ঘুষ না দেওয়ায় মামলা”

ভুক্তভোগী চালক আব্দুল আজম জানান, ‘চট্টগ্রাম শহর থেকে মাল নিয়ে আসা পিকআপ (চট্ট মেট্রো-ন-১১-৮৯১১) কেরানীহাটে প্রবেশ করলে পুলিশ সদস্য মোসাদ্দেক কাগজ দেখতে চান। ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স, ইনস্যুরেন্স—সবই আপডেট ছিল। তবু তিনি বলেন, “ভাই, কিছু বুঝেন, টাকা দেন, চলে যান।”’

চালক টাকা দিতে রাজি না হলে তাকে পুলিশ বক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সার্জেন্ট মাহফুজুর রহমান প্রথমে কিছু না বলে কাগজ নাড়াচাড়া করেন। পরে মোসাদ্দেক চালককে জানিয়ে দেন—“স্যার বলছেন দুই হাজার টাকা দেন, না হলে ব্যবস্থা হবে।”
চালক রাজি না হলে বলা হয়, এক হাজার টাকা দিলেও চলবে।

চালক আজম জানান, ‘আমি বলি, ভাই ৪ হাজার টাকায় মাল এনেছি, এক হাজারও দিতে পারব না। তখন তারা বলেন, গাড়ির পেছনে নম্বরপ্লেট নেই, সামনের সিটে অতিরিক্ত যাত্রী রয়েছে—এই দুই অভিযোগে ১৩ হাজার টাকার মামলা করে দেন।’

প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য: “টাকা না দেওয়াতেই মামলা” প্রত্যক্ষদর্শী মো. রিয়াজ বলেন, ‘আমি পাশেই ছিলাম। চালক বলছিলেন, ভাই টাকা দেব না। মোসাদ্দেক বলছিল, “মামলার ঝামেলায় যাবেন না, টাকা দেন।” পরে চালক রাজি না হওয়ায় মামলা কেটে দেয়।’

চালকের ভাষ্যমতে, পেছনের নম্বরপ্লেট দুর্ঘটনায় পড়ে যায়, নতুন বানাতে দেওয়া হয়েছিল। আর সামনের সিটে দুজন শ্রমিক ছিল, যারা মাল নামানোর সহকারী হিসেবে ছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের বিপরীত দাবি: এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহফুজুর রহমান ফোনে বলেন, চালক ঘুষ না দেওয়ায় মামলা দিয়েছি—এটি ভিত্তিহীন। আপনি চালকের সাথে কথা বললে বুঝতে পারবেন। আমি কোন টাকা চাইনি।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া: নিয়মিত হয়রানি, তদন্ত দাবি: স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের মতে,‘কেরানীহাট এলাকায় এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর