আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): বর্ষার দুপুর। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে। ঠিক তখনই স্কুলব্যাগ কাঁধে নিয়ে পথ হাঁটছে ছোট্ট রিজিয়া। বয়স মাত্র ১৪ বছর। তার চোখে ক্লান্তি, পায়ে জুতার বদলে কাদা। হঠাৎ পিছলে পড়ে গেলো, বইয়ের ব্যাগও কাদায় ভিজে একাকার। এটা তার প্রতিদিনকার গল্প, তার জীবনযুদ্ধ—আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের উত্তর সরেঙ্গার হযরত আবদুস ছমদ শাহ সড়কের।
এমন গল্পের সাক্ষী অন্তত ১০ হাজার মানুষ। কারণ এই সড়কটিই ছিল সরেঙ্গা ও ফকির পাড়ার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু আজ থেকে ঠিক দুই বছর আগে, সড়কটির উন্নয়নের আশায় খনন কাজ শুরু হলেও তা শেষ হয়নি আজও। বরং পুরো রাস্তাটি রূপ নিয়েছে এক কাদা-পানির ফাঁদে।
২০২৩ সালে ২০৮৮ মিটার দীর্ঘ এই সড়কের উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এলজিইডির অধীনে কাজটি পায় স্থানীয় এক ঠিকাদার, মোহাম্মদ ইব্রাহিম। শুরুতে কাজের গতি ভালো থাকলেও, কিছুদূর কার্পেটিং করে থেমে যায় সব। অবশিষ্ট ১২৩৮ মিটার খুঁড়ে রেখে চলে যান ঠিকাদার। এখন সেই গর্তগুলোতেই জমে থাকে বৃষ্টির পানি আর কাদা। যানবাহন তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাও দুঃসাধ্য।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করতেন বৃদ্ধ আবদুল মুনাফ। তিনি বলেন, “আগে যখন রাস্তা ছিল কাঁচা, অন্তত হেঁটে যেতাম। এখন তো কাদা ভেঙে চলাও কষ্ট। কতো বার হেঁটে পড়ে গেছি, গুনে রাখিনি।”
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, “সড়কটির ব্যবহারকারী হাজারো শিক্ষার্থী, রোগী, নারী ও বৃদ্ধ। অথচ দুই বছরেও কাজ শেষ হয়নি। আমরা বললেই ঠিকাদার ক্ষমতার দাপট দেখান।”
এদিকে ঠিকাদার মো. ইব্রাহিম বলছেন, “বৃষ্টির কারণে কাজ করতে পারছি না, এটা মহাভারত অশুদ্ধ নয়। খুব দ্রুত কাজ শুরু করবো।”
তবে এ কথায় শান্তি নেই এলাকাবাসীর। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন—তাহলে দুই বছর ধরে রোদ ছিল কোথায়?
উপজেলা প্রকৌশলী জাহেদুল আলম চৌধুরী বলেন, “ঈদের পর কাজ শুরুর কথা ছিল। কী কারণে এখনো শুরু হয়নি জানি না। আমি সরেজমিন যাচাই করতে যাব।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, “বর্ষায় এই দুর্ভোগ সত্যিই দুঃখজনক। দ্রুত কাজ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হবে।”
এ যেন একটি রাস্তার নয়, একটি অঞ্চলের গল্প। একটি রাস্তার উন্নয়ন থমকে গেলে, থেমে যায় মানুষের স্বাভাবিক জীবন। হোঁচট খায় স্বপ্ন, আটকে পড়ে সময়।
এই গল্পের শেষ কোথায়, তা জানে না কেউ। তবে একটাই প্রার্থনা—এই সড়ক যেন আবার হয়ে ওঠে চলার পথ, না হয় কোনো শিশুর স্কুলের পথে প্রতিদিনকার কষ্টের নাম।
Leave a Reply