আজ ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সামাজিক সংগঠন “শুদ্ধ বৃত্ত” সেন্টমার্টিন শাখার আয়োজনে মতবিনিময় সভা


অনলাইন ডেস্ক

সুপরিকল্পিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ গড়া এবং অহংকার মুক্ত ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক সংগঠন “শুদ্ধ বৃত্ত” সেন্টমার্টিন শাখার আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সেন্টমার্টিন দ্বীপে এশিয়া বাংলা রেষ্টুরেন্টে ও ইউরো বাংলা রেস্তোরায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়, উৎসব মুখর পরিবেশে “শুদ্ধ বৃত্ত” কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি ছিলেন নুরুল আলম আরমান সভাপতি- বি.এন.পি সেন্টমার্টিন, প্রধান বক্তা ছিলেন মো: ইসহাক মাহমুদ চৌধুরী, সহ-সভাপতি সেন্টমার্টিন বিএনপি, সহ-সভাপতি “শুদ্ধ বৃত্ত”- কক্সবাজার জেলা শাখা, বিশেষ অতিথি ছিলেন, হাবিবুর রহমান খাঁন সভাপতি -বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী – সেন্টমার্টিন, ফৌজুল আহাদ চৌধুরী প্রতিষ্টাতা- সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন “শুদ্ধ বৃত্ত”, মাস্টার মদন বাবু সহকারি হেডমাস্টার- বি.এন উচ্চ বিদ্যালয় সেন্টমার্টিন, মীর মোশারফ হোসাইন সভাপতি “শুদ্ধ বৃত্ত”- কক্সবাজার জেলা শাখা, এম.এ খুমিনী শিক্ষক – বি.এন ইসলামিক উচ্চ বিদ্যালয় সেন্টমার্টিন, মো: জিয়াউল হক জিয়া, যুগ্ন-আহবায়ক যুবদল সেন্টমার্টিন, সভাপতি – “শুদ্ধ বৃত্ত” সেন্টমার্টিন শাখা, আইয়াজ উদ্দীন কাজল, শিক্ষক- বি.এন ইসলামিক উচ্চ বিদ্যালয় সেন্টমার্টিন, জিয়াউর রহমান সাধারণ-সম্পাদক – স্বেচ্ছাসেবক দল সেন্টমার্টিন, মো আবু তাহের,এম.ডি- বে ক্রুজার-৭, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিত এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ না করে বরং ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা ও পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য রক্ষার দাবি জানিয়েছেন দ্বীপবাসী ও সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন “শুদ্ধ বৃত্ত”।

এ সময় বক্তারা বলেন, যদি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা না করে সরকার এক তরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিত ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করে তবে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এই সময় সেন্টমার্টিন বি.এন.পির সভাপতি- নুরুল আলম আরমান বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমাদের দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক এ দ্বীপে ভ্রমণ করেন ও রাত্রে অবস্থান করে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেন। দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট সেন্টমার্টিনকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন “শুদ্ধ বৃত্ত” এর প্রতিষ্ঠাতা- ফৌজুল আহাদ চৌধুরী বলেন, বিদেশি জার্নালের রেফারেন্স টেনে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেছেন, পর্যটকরা কোরাল খুলে নিয়ে যাচ্ছে, তাই ২০৪৫ সালের মধ্যে নাকি সব কোরাল ক্ষয় হয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ডুবে যাবে। পরিবেশ উপদেষ্টার এই কথা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। বাস্তবতা হচ্ছে–– দ্বীপের কোরালগুলো অনেক বড়, অনেক ওজন, অনেক ধারালো এবং পানির অনেক নিচে থাকে যেগুলো মানুষের পক্ষে তুলে আনা সম্ভব নয়। কোরাল নিয়ে আসা দূরের কথা, জীবন্ত কোরালে হাত দিলেই হাত কেটে যায়। তাই কথিত বিদেশি জার্নাল কিংবা পরিবেশবাদীদের কোরাল নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে যে বক্তব্য সেটি অসত্য ও মিথ্যা প্রচারণা। তাই  মিথ্যা অজুহাতে দ্বীপে যাওয়া ও অবস্থানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার রহস্য জনগণ জানতে চায়। এখন সব চেয়ে বেশি জরুরী সেন্টমার্টিন দ্বীপে একটি উন্নত মানের হসপিটাল, ফায়ার সার্ভিস, যাতায়াত ব্যবস্তা উন্নয়ন করা ইত্যাদি।

মো: ইসহাক মাহমুদ চৌধুরী সহ-সভাপতি সেন্টমার্টিন বিএনপি, সহ-সভাপতি “শুদ্ধ বৃত্ত”- কক্সবাজার জেলা শাখা বলেন সেন্টমার্টিন দ্বীপটি ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি অবস্থানে, এই দ্বীপে বহু মানুষ জীবন যাপন করে, এই অবস্থায় দ্বীপে ভ্রমণ বন্ধ রাখলে অথবা সময় নির্ধারন করে দিলে এক সময় দ্বীপ জনশূন্য হয়ে যাবে। পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের মগ, আরাকানি ও ভারতের জেলেরা একসময় দ্বীপটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাবে। ইতোমধ্যেই মিয়ানমার ও আরাকান আর্মি দ্বীপটিকে একাধিকবার তাদের বলেও দাবি করেছে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষার তাগিদেই নারিকেল জিঞ্জিরা দ্বীপে জনগণের আসা যাওয়াকে উৎসাহিত করতে হবে। এবং আমরা সবাই মিলেমিশে ঐক্য তাকার আহ্বান জানাইনাই।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেন্টমার্টিন শাখার সভাপতি হাবিবুর রহমান খাঁন বলেন, সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দ্বীপগুলো উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে বিপরীত চিত্র। আমাদের পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ সেন্টমার্টিন দ্বীপকে কেন্দ্র করে যে পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠেছে তার প্রসার না করে বরং গলাটিপে মেরে ফেলার উদ্যোগ নিতে চায় সরকার। যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।

সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন “শুদ্ধ বৃত্ত”- কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি – মীর মোশারফ হোসাইন বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক সীমিত এবং রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করলে হাজার হাজার মানুষের জীবন, জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়নমুখী জীবনের ধারা বিপর্যস্ত হবে। এতে মানবিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বীপবাসীর জীবন জীবিকা রক্ষার স্বার্থে দ্বীপের সকল পর্যটন স্থাপনাকে অপসারণের পরিবর্তে পর্যটন শিল্পকে চলমান রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

যুবদল সেন্টমার্টিন শাখার যুগ্ম-আহবায়ক এবং সামাজিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন “শুদ্ধ বৃত্ত” সেন্টমার্টিন শাখার সভাপতি – জনাব মো: জিয়াউল হক জিয়া, বলেন টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত পথ নির্ধারণ করে লাখো মানুষের জীবন-জীবিকা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দ্বীপে প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা বাস্তবায়ন অথবা দ্বীপের প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। অক্টোবরের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিতে হবে, সেন্টমার্টিন দ্বীপ বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বীপবাসী এবং সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

মাস্টার মদন বাবু সহকারি হেডমাস্টার- বি.এন উচ্চ বিদ্যালয় সেন্টমার্টিন বলেন, পর্যটকদের সুবিধার্থে বিনিয়োগ বাড়ানো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মানসম্মত সাপোর্ট সার্ভিস এবং দেশে- বিদেশে প্রচার-প্রচারণা বাড়ানোর জন্য আরও বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণ করে বছরের মাত্র চার মাস, বাকি সময়টাতে সরকার চাইলে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা করা হয় না। সব আলোচনা শুধু পর্যটন মৌসুমেই শুরু হয়। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারলে কক্সবাজারের পাশাপাশি এই দ্বীপ দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠবে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর