অনলাইন ডেস্কঃ মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকালে টসে জিতে মুমিনুল হক যখন ব্যাটিং নিয়েছিলেন, তখন কী ভুলেও বুঝতে পেরেছেন কী ঝড় বইতে চলেছে তাদের ওপর! বুঝলে নিশ্চয়ই ব্যাটিংটা নিতেন না। অবশ্য নিয়েও খুব একটা ভুল করেছেন কী?
উত্তর হ্যাঁ-না হতেই পারে। তবে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন পুরোটা সময় লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম ব্যাট হাতে দর্শকদের যে বিনোদন দিয়েছেন, আনন্দদায়ী শটে মন ভরিয়েছেন, ব্যাট হাতে তুলির আঁচড়ে সবুজ গালিচায় যে শিল্পের অঙ্কন করেছেন, জোড়া শতকে উদযাপনে ভেসেছেন, রেকর্ড গড়ে দলকে স্বস্তি দিয়েছেন, তাতে চোখ বন্ধ করে বলাই যায় মাঠে লিটন-মুশি ক্রিকেটটা যতটা উপভোগ করেছেন, তার চেয়েও হাজারগুণ বেশি চোখের এবং মনের শান্তি পেয়েছেন টাইগার ক্রিকেটভক্তরা।
সকালে লঙ্কান ঝড়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে রেকর্ড গড়ে সারাদিনে অবিচ্ছিন্ন ২৫৩ জুটি গড়ে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন বাংলাদেশের করে নিলো লিটন ও মুশফিক। তাদের ব্যাটে ভর করে মিরপুরের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটের ২৭৭ রান। শতকের দেখা পেয়েছেন লিটন-মুশফিক দুইজনই।
সকালে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই বোল্ড হয়ে শূন্য রানে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়। ছয় ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে ৪টি ডাক দেখে গেছেন এই ওপেনার। আরেক ওপানের তামিম ইকবালও রানের খাতা খোলার আগে আসিথা ফার্নান্দোর বলে পয়েন্টে জয়াবিক্রমার ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন।
অফফর্মে থাকা টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল এখনো মাঠে যেন খাবি খাচ্ছেন। ২ চারে ৯ রান করতেই লঙ্কান কিপার ডিকভেলার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। দলীয় ২৪ রানের মাথায় নাজমুল হাসান শান্ত ৮ রান করে ফিরতেই পরের বলে সাকিব আল হাসান একই পথে হাঁটেন। ৬১ টেস্ট ক্যারিয়ারে পঞ্চম শূন্য দেখলেন সাকিবও।
সকালে ৭ ওভারের মধ্যে তিন শূন্যে ৫ উইকেট হারানো ধ্বংসস্তুপে থাকা বাংলাদেশ তখন সর্বনিম্ন রানের স্কোর পার করতে পারবে কি না এটা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়ে যায়। সেখান থেকেই শুরু লিটন-মুশফিকের। দুইজনই খারাপ বলে আক্রমণ, ভালো বলে দেখেশুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। যতই সময় গড়াতে থাকে ততই চওড়া হতে থাকে দুইজনের ব্যাট।
দ্বিতীয় সেশনে দুইজনই মাঠের চারদিক থেকে রান আদায় করে নিতে থাকেন। এক পর্যায়ে দুইজনই ৮৭ রানের জুটি গড়লে ভাঙে ৬৩ বছরের পুরানো এক রেকর্ড। ১৯৫৯ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচে সেই রেকর্ডটি গড়েন পাকিস্তানের ওয়ালিস ম্যাথিয়াস ও সুজাউদ্দিন।
সেই ম্যাচে ২২ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারানোর পর এই দুই পাকিস্তানি ক্রিকেটার ৮৬ রানের জুটি গড়ে দলকে উদ্ধার করেন। ২৫ রানের নিচে ৫ উইকেট হারানোর পর ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ।
তবে লিটন-মুশি সেটা ভেঙে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। এরপর লিটন ৮ চারে ৯৬ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন। অবশ্য তার আগে ব্যক্তিগত ৪৭ রানে একবার জীবন পান লিটন। অপরপ্রান্তে নিখুঁত ছিলেন মুশফিক। ১১২ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন শেষ ম্যাচে শতক হাঁকানো মুশি।
এদিকে ফিফটি হাঁকিয়ে দ্রুত রান বাড়াতে থাকেন লিটন। পরের পঞ্চাশ করতে মাত্র ৫৩ বল খেলেন লিটন। ১৪৯ বলে ১৩ চারে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট শতক তুলে নেন অসাধারণ ফর্মে থাকা লিটন। গত দুই বছরের মধ্যে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের এই তিন শতক পেলেন লিটন। গত দুই বছরে পঞ্চাশোর্ধ্ব গড়ে ১২০৯ রান করলেন এই ব্যাটসম্যান।
দিনশেষে এই দুই ব্যাটসম্যান ২৫৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছে। লিটন প্রথম দিন শেষে ক্যারিয়ার সেরা ১৩৫ রানে অপরাজিত আছেন। অপরপ্রান্তে মুশফিকের সংগ্রহ অপরাজিত ১১৫ রান। লঙ্কানদের পক্ষে এদিন কাসুন রাজিথা ৪৩ রানে ৩টি ও আসিথা ফার্নান্দো ৮০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন।
Leave a Reply