মুক্ত সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা দেশ ও জাতিকে সঠিক পথ দেখায়। যেখানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শক্ত অবস্থানে থাকে না কিংবা থাকতে পারে না সেখানে গণমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। পৃথিবীর সকল দেশেই গণমাধ্যম কর্মীরা সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে কম বেশি বাধাগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো হামলা-মামলার শিকার হতে হয়। আমাদের দেশেও গণমাধ্যম কর্মীরা সঠিক সংবাদ প্রকাশের জন্য নানারকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রকাশ করে গণমাধ্যম কর্মীরা রাষ্ট্রকে সজাগ রাখে এবং সঠিক পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে থাকে। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ওই কারণে গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যমকর্মীদের শত্রু মনে করে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কল্যাণে নিবেদিত গণমাধ্যম এর পাশে রাষ্ট্র পদক্ষেপ নিতে অনেক ক্ষেত্রে ভুল করে থাকে। আবার পদক্ষেপ নেন না।
করোনাকালীন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রকাশ করতে গিয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মী নির্যাতন মামলার শিকার হয়েছেন। গণমাধ্যমে শুধুমাত্র ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি প্রকাশ করে তা নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়ন জাতীর কাছে তুলে ধরে থাকে। বর্তমান সরকারের গৃহীত আশ্রায়ন প্রকল্প বিশ্বের প্রতিটি দেশের অনুকরণীয় হতে পারে। এটি মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি।আশ্রায়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ একদিন বহিবিশ্বের প্রশংসা এবং আন্তর্জাতিক সম্মাননা পাবে। এপ্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোন ব্যক্তি কোন অনিয়ম করে থাকে, আর সে তথ্য তুলে ধরে গণমাধ্যম সরকারকে সহায়তা করেছে বলে সকলেই একমত হবেন বলে আশা করি।
সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিত্যপণ্যের মূল্য সকলকেই কমবেশি বেকায়দায় ফেলেছে। কিছু কিছু আমদানি পণ্যের দাম যৌক্তিকভাবে বেড়েছে সত্য। দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ থাকতে পারে না। আর ভোজ্যতেল আমদানিকৃত নিত্যব্যবহার্য পণ্যের মূল্য অযৌক্তিকভাবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে। আর সে তথ্য গণমাধ্যম যখন লাগাতারভাবে সরকারকে তুলে ধরতে সহযোগিতা করেছে, তখনই এব্যাপারে রাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও করতে পেরেছে। কাজেই গণমাধ্যম কারো শত্রু বা প্রতিপক্ষ নয় এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। বরং গণমাধ্যম সরকার ও জাতির জন্য কল্যাণকর রাষ্ট্র গরতে ভূমিকা রেখে চলেছে। গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্র কিংবা জাতির জন্য কল্যাণকর নয় ।
গণমাধ্যমকর্মীরা যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করতে যান, তখন প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয় উর্ধ্বতন কতৃপক্ষর সাথে যোগাযোগ করার জন্য। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের আদেশ ছাড়া তথ্য দেয়া যাবে না। সেই ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ একই কথা বলে থাকেন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম অসহায়। যদিও বলা আছে, তথ্য অধিকার আইনে সঠিক তথ্য সরবরাহের জন্য। একদিকে বলা হয়েছে সঠিক তথ্য সরবরাহ করার, আবার অন্যদিকে বলা হয়েছে তথ্য না দেয়ার।
তারপরও গণমাধ্যমকর্মীরা দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে চলেছে। এ কথা হলফ করে বলতে দ্বিধা নেই, গনমাধ্যম কর্মীরা যতটা দেশ ও জাতির কল্যানে নিবেদিত, পরিবার কিংবা স্বজনদের জন্য ততটা নিবেদিত নয়। একথা সত্য গণমাধ্যম যত বেশি তথ্য প্রকাশ করবে , রাষ্ট্র ততো বেশি মানুষের কল্যাণে পদক্ষেপ নিতে পারবে। আজ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। এদিবসে একজন গণমাধ্যমকর্মী হয়ে বসে থাকতে পারিনা। পেশাদারিত্বের কথা ভেবে, অন্তত এদিনে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা উচিত বলে কলম কাগজ নিয়ে বসা। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এদিবসটি পালনের ঘোষনা দেয়া হয়।ওয়াল্ড প্রেস ফ্রিতম ডে। এদিবসটি সামনে এলে গনমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সংবাদ কর্মিদের পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং নিরাপদ পরিবেশে বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়ায়।
সাংবাদিকদের স্বার্থ নিরাপত্তা নিয়ে সোচ্চার ফ্রান্স ভিত্তিক সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংগঠনের তথ্যমতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সবার পেছনে। এবছর পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের দিনে পড়েছে ৩ মে আন্তর্জাতিক এ দিবসটি পালনের।
এদিনে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম এবং পোর্টাল ছাড়া সকল গণমাধ্যম বন্ধ থাকবে।গণমাধ্যম কর্মীরা আশাকরি সীমিত পরিসরে হলেও পালন করবে বিশ্ব গণমাধ্যম দিবস।অধিকাংশ গণমাধ্যম এখন ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।সংগত কারনে গণমাধ্যম কর্মিরা তাদের উপর অর্পিত ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।তারপরও থেমে নেই নৈতিক দায়িত্ব পালন থেকে নিজেকে সড়িয়ে রাখা। যেখান অন্যায়,সেখানে ন্যায়। যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি, সেখানেই নিয়ম আর নীতি। এভাবেই এগিয়ে চলেছে গণমাধ্যম এবং গণমাধ্যম কর্মীরা।
কিরণ শর্মা
লেখকঃ সংবাদকর্মী ও সমাজ সংস্কারক
Leave a Reply