আজ ১১ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৫শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পাল্টে গেল কক্সবাজার জেলা কারাগারের চিত্র


🟩 জেল সুপার ও জেলারের নিরলস প্রচেষ্টার ফসল, বন্দিদের সেবার মান বৃদ্ধি

🟩 বন্দিরা প্রতি সপ্তাহে ৫ টাকার বিনিময়ে ১০ মিনিট স্বজনদের সাথে কথা বলছে

🟩 কারাগারে নেই কোন রকম সীট বাণিজ্য

🟩 কারা ক্যান্টিনে আগের চেয়ে জিনিসপত্রের দাম কমেছে

🟩 খাবারের মানে সন্তুষ্ট বন্দিগণ

আবদুর রাজ্জাক, জেলা প্রতিনিধি,কক্সবাজার।। পাল্টে গেছে কক্সবাজার জেলা কারাগারের চিত্র। আগের চেয়ে বেড়েছে বন্দিদের সেবার মান। পাশাপাশি কারা অভ্যন্তরের সামগ্রিক উন্নয়নের চিত্র ও স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশে বিদ্যমান থাকায় মহাখুশি কারাবন্দিরা। বর্তমান জেল সুপার ও জেলারের  সুদক্ষ পরিচালনায় কক্সবাজার জেলা কারাগার এখন দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত মডেল কারাগার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এমনটাই জানালেন সদ্য জামিনে মুক্ত একাধিক কারাবন্দি। তাদের মতে, বর্তমান জেল সুপার মো: জাবেদ মেহেদী ও জেলার আবু মুছার যোগ্য নেতৃত্ব, কঠোর পদক্ষেপ ও নিরলস প্রচেষ্টায় কক্সবাজার জেলা কারাগার বাংলাদেশের অন্যান্য কারাগারের তুলনায় ব্যাতিক্রম এক নজির সৃষ্টি করেছে। রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোর পথ” এ শ্লোগানকে বাস্তবে রূপ দিতে কক্সবাজার জেল সুপার মো: জাবেদ মেহেদীর যোগ্য নেতৃত্বে কারাগারে ভেতরে বাহিরে কর্মরতরা একাগ্রচিত্তে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। জেলার আবু মুছা ও কারাগারের স্বার্থ রক্ষা করে বন্দীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। কক্সবাজার জেলা কারাগারে আগের চেয়ে বেড়েছে বন্দী সেবার মান। বর্তমান জেল সুপার ও জেলারের সুদক্ষ পরিচালনায় কক্সবাজার জেলা কারাগার এখন বাংলাদেশের মডেল কারাগার হিসেবে বাস্তবিক দৃষ্টান্ত বলে জানালেন সদ্য জামিনে মুক্ত হাছান শরীফসহ একাধিক কারাবন্দি। পবিত্র রমজান মাসে কারা অভ্যন্তরে বন্দীদের জন্য বাড়ে হরেক রকম সুযোগ সুবিধা। ইফতার, সেহরি এবং ধর্মীয় রীতি নীতি অনুসরণ কারিরা সেখানকার পরিবেশকে শান্ত করে তুলে। জেল সুপার মো: জাবেদ মেহেদী ও জেলার আবু মুছা কক্সবাজার জেলা কারাগারে যোগদান করার পর থেকে বিধি বিধান অনুসরণ করেই কারাগার পরিচালিত হচ্ছে। কারা বিধি মোতাবেক প্রাপ্য সকল সুবিধা বন্দিদের সমানভাবে দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে জেল সুপারের নেতৃত্বে কারাগারে শান্তি-শৃংখলা সৃষ্টি, কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, টেলিফোনে কথা বলা সার্বক্ষণিক তদারকি, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পয়: নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি বন্দীদের মৌলিক চাহিদাসমূহ পৌঁছে দিতে কাজ করছেন কারাগারের সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীরা। সততায় অবিচল থেকে মডেল কারাগারে রুপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছেন জেল সুপার ও জেলার। এদিকে বর্তমানে কারাগারে ও কারা হাসপাতালে নেই কোন সিট বাণিজ্য। বন্দিদের
চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য কক্সবাজার কারা হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন। এসব চিকিৎসক প্রতিদিন রোগিদের দেখেন এবং চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে। সেখান থেকে প্রকৃত অসুস্থ রোগিদের কারা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। সিরিয়াস রোগীদেরকে কার হাসপাতাল থেকে বাহির হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের মতে, বর্তমান জেল সুপার মো: জাবেদ মেহেদী ও জেলার আবু মুছার যোগ্য যোগ্য নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা কারাগার বাংলাদেশের অন্যান্য কারাগারের তুলনায় অনেক এগিয়ে। এদিকে সদ্য কারামুক্ত কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার রহিম জানান, তারা একটি মামলায় বেশ কিছুদিন কারান্তরীন ছিল। বর্তমানে কারাগারের পরিবেশ বেশ চমৎকার। কারাগারে প্রত্যেক বন্দিদের সমান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারে নেই কোন ধরনের সিট বাণিজ্য।
অন্যদিকে সদ্য কারামুক্ত কুতুবদিয়া আলী আকবর ড়েইলের মোহাম্মদ আমিন ও হাফেজ করিম জানান, কারাগারে উন্নতমানের খাবার দেয়া হয় বন্দিদের। কারা হাসপাতালে অসুস্থ রোগী ছাড়া অন্য কাউকে ভর্তি করা হয় না। কারা কর্তৃপক্ষ খুব সুন্দরভাবে কারাগারে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। টেকনাফ নাইট্যং পাড়ার আব্দুর রহমান সম্প্রতি জামিনে মুক্ত হয়েছেন তিনি বলেন, আমার দেখা মতে কোন ইয়াবা ব্যবসায়ী বাড়তি কোন সুযোগ-সুবিধা তথা আরাম আয়াশে থাকতে না পারে সেজন্য জেল সুপার ও জেলারসহ কারা প্রশাসন সর্বদা সজাগ রয়েছেন। প্রতিদিন তিনি কারাগারের সকল ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন এবং বন্দি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কারণে কারো অসুবিধা হচ্ছে না কিনা সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেন। শুধু তাই নয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যেন অনৈতিক কর্মকান্ড করতে না পারে সেজন্য কারারক্ষীদের সচেতন হওয়ার নির্দেশ দেন। গতকাল দুপুরে জেলা কারাগারে কথা হয় মহেশখালী পৌরসভার ঘোনাপাড়া এলাকার কুলসুম আক্তারের সাথে। তিনি এসেছেন তার কারাবন্দী স্বামীর জন্যই পিসিতে টাকা দিতে। তিনি জানান, স্বামীর সাথে সাক্ষাত করে এই কারাগারের ভেতরের পরিবেশের যথেষ্ট সুনাম শুনেছেন।
ডেপুটি জেলার আবদু সোবহান বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে কারা বন্দিদের প্রত্যক্ষ সেবা প্রদান করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারাগারে যাতে বন্দীরা সমান ভাবে সুযোগ সুবিধা ও সেবা পায় সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে এবং কেহ যেন কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।
উল্লেখ্য কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দী ধারনক্ষমতা ৮ শ ৩০ জন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে বন্দী রয়েছেন প্রায় ৪ হাজার।ধারন ক্ষমতার প্রায় ৫ গুন বেশি বন্দী নিয়ে মানব সেবায় নজির সৃষ্টি করা। উক্ত কারাগারে মায়ের সাথে বিনা অপরাধে জেল খাটা শিশুদের রোজ দুইবার তরল দুধ দেওয়া হয়। জেলে থাকা এসব শিশুদের জন্য রয়েছে ডে-কেয়ার (পরিচর্যা) সেন্টার। শিক্ষকরা রোজ তাদের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা দিয়ে চলেছেন। কারাভ্যন্তরে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নকারীদের বেশিরভাগই হচ্ছেন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত ও স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহীরা। কারাগারে ৩০০ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬ তলা ভবন উদ্বোধন হওয়ায় বন্দিদের দীর্ঘদিনের শোয়ার জায়গার সমস্যার সমাধান অনেকাংশে হচ্ছে। তাছাড়া আইসিআরসি কর্তৃক কারাগারের বাহিরে ২ টি গভীর নলকূপ স্থাপিত হয়েছে ইতোমধ্যে। কারাগারে মশা নিধনের জন্য রয়েছে ফগার মেশিন। এদিকে দেখা সাক্ষাতের পাশাপাশি বিধি মোতাবেক প্রতি সপ্তাহে একবার ৫ টাকার বিনিময়ে প্রত্যেক বন্দী পরিবারের সাথে ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলতে পারে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে জেলার আবু মুছা বলেন, আমি বিগত ১৭/০৯/২০২৪ ইংরেজি তারিখ কক্সবাজার জেলা কারাগারে যোগদানের পর থেকে কারাগারে শান্তি-শৃংখলা সৃষ্টি, কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, বন্দিদের দেখা সাক্ষাতের পাশাপাশি বিধি মোতাবেক প্রতি সপ্তাহে একবার ৫ টাকার বিনিময়ে প্রত্যেক বন্দী পরিবারের সাথে ১০ মিনিট মোবাইলে কথা বলা, সার্বক্ষণিক তদারকি, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পয়: নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি বন্দীদের মৌলিক চাহিদাসমূহ পুরন করে আসছি।
এ ব্যাপারে জেল সুপার মো: জাবেদ মেহেদী বলেন, কারাগার একটি স্পর্শকাতর সরকারী গুরুত্বপুর্ন প্রতিষ্ঠান। কাঠামো ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আমার সার্বিক প্রচেষ্টা এবং কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কারাগারের উন্নয়নের চিত্র পাল্টে দেওয়ার চেষ্টায় রয়েছি। কারাগারের সেবার মান বাড়িয়েছি। কারাগারে মাদকের প্রবেশ যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।এখনো অনিয়ম-দুর্নীতির কোন প্রশ্নই আসে না। যদি কারাগারের কোন সদস্য অনিয়মের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন কারা বন্দীরা সমাজ ও দেশের বোঝা নয়, কারামুক্ত হলেই তারা হবেন পরিবার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

 

 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর