আজ ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল পদ্মা সেতুর মাধ্যমে তাদের জবাব


‘পদ্মা সেতু নির্মাণে যারা বাধা দিয়েছিল, আমরা তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি’— এমন মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আসুন, দেখুন পদ্মা সেতু হয়েছে কি না?’

শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় অংশে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে যারা জমি দিয়েছিলেন, তাদের ঘর করে দিয়েছি, জমি দিয়েছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপনারা উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একটা কথা মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন; জীবন দিয়েছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা।

‘এই পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাকে অনেকে অপমান করেছে। আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণ করবই। সেই সাহস দিয়েছেন আপনারা, শক্তি দিয়েছেন আপনারা। আমি আপনাদের পাশে আছি। এখন তো পদ্মা সেতু হয়ে গেল। আমরা আসব, আপনারাও যাবেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পদ্মা সেতু হবে না। তাকে বলব, আসুন, দেখুন পদ্মা সেতু হয়েছে কি না?’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০০১ সালে আমরা পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলাম। খালেদা জিয়া এসে বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। তখন তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ কোনো দিন নাকি পদ্মা সেতুর কাজ করতে পারবে না।

উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এই আপনারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন বলেই সম্ভব হয়েছে। সারা দেশের মানুষ পাশে দাঁড়িয়েছে। পদ্মা সেতু প্রমাণ করে জনগণই শক্তি, বড় শক্তি।

তিনি বলেন, আজ আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বিশেষ একটি দিন। আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন করে আসলাম।

সরকারপ্রধান বলেন, আরো উন্নত জীবন যেন আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা পায় সে ব্যবস্থাও আমি করব। আজ আপনাদের কাছে এটাই আমার ওয়াদা।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশে আমরা খাদ্য, বিদ্যুৎ ও গৃহহীনদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ‘বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি, পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ; আপনাদের পাশেই আমি আছি, আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সবসময় প্রস্তুত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশ আপনাদের, এই দেশ আমাদের। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন এবং এই দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২০০১ সালে তিনি ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করলেও খালেদা জিয়া সরকারের এসে সব প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। আবার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে বয়সের কারণে চলে যেতে হলো, তখন তিনি আমেরিকায় গিয়ে তদবির করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলেন।

তিনি বলেন, সে সময় বলা হলো, দুর্নীতি হয়েছে, কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে? যে সেতু আমাদের প্রাণের সেতু, যে সেতুর সঙ্গে আমার এই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য জড়িত। এই সেতু নির্মাণে কেন দুর্নীতি হবে? তারা (বিশ্বব্যাংক) টাকাই দেয়নি, কিন্তু দুর্নীতি-ষড়যন্ত্র বলে টাকা দেওয়া বন্ধ করল।

আর কাউকে এই বর্ষাকালে খরস্রোতা পদ্মা পাড়ি দিতে হবে না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আর কাউকে এই পদ্মা নদী পাড়ি দিতে গিয়ে বাবা, মা, ভাই-বোন, সন্তান বা আপনজনকে হারাতে হবে না। আপনারা এখন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবেন। সেই ব্যবস্থাই আমরা করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, আর যারা এই সেতু নির্মাণে বাধার সৃষ্টি করেছিল তাদেরকে এই পদ্মা সেতুর মধ্যদিয়ে উপযুক্ত একটা জবাব আমরা দিতে পেরেছি- না, বাংলাদেশ পারে। আর বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও পারবে না।

প্রধামন্ত্রী বলেন, ’৭৫ এর ১৫ই আগস্ট বাবা, মা, ভাইদের হারানোর পর ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। এরপর একরকম জোর করেই নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে আসি।

নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে ফিরে এসে সমগ্র বাংলাদেশ তখন ঘুরে বেড়িয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সে সময় শরীয়তপুরে আসার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা জানান, তিনি লঞ্চে করে আসার পর লঞ্চ নষ্ট হয়ে গেলে নৌকায় করে প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়িয়েছেন, কাদা-পানিতে নেমেছেন, মিটিং করেছেন। আজকে সেই শরীয়তপুরের চেহারা পাল্টে গেছে। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রিজ করেছে এবং সার্বিক উন্নয়ন করেছে। সে সময় মাদারীপুরও লঞ্চে যেতে হতো এবং গোপালগঞ্জ যেতে ঢাকা থেকে ২২ ঘণ্টা সময় লাগত। এসব এলাকা অত্যন্ত দুর্গম ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট উন্নয়নসহ তার সরকার শিকারপুর, দোয়ারিকা এবং গাবখান সেতু করে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছে।

করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি সবাইকে টিকা গ্রহণ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

সারা দেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ পদ্মা সেতু হয়েছে, এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে, কল-কারখানা এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পসহ নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে, মানুষের কর্মসংস্থান হবে। অন্তত ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করতে পারব।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর