২০১০ সালে রাজধানীর কদমতলী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে জেলে যান সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ (৩৪)। কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে পলাতক হন তিনি। একপর্যায়ে পলাতক সোহাগের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। তখন কৌশলে নিজের ফুপাত ভাই হোসেনকে মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নকল সোহাগ সাজিয়ে জেলে পাঠানো হয়।
এর মধ্যে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে পাসপোর্টও তৈরি করেন আসল সোহাগ। দুবাই যাওয়ার সব প্রস্তুতিও ছিল তার। তবে বিদেশ যেতে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শনিবার (২৯শে জানুয়ারি) টিকা নিতে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান তিনি। আর তখন রেবের হাতে ধরা পড়েন দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকা যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ।
রোববার (৩০শে জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাব-১০ -এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ২০১০ সালের ২৬শে নভেম্বর কদমতলী এলাকায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রধান আসামি সোহাগ ২২শে ডিসেম্বর গ্রেফতার হন। ২০১৪ সালের ১৬ই মে জামিনে বেরিয়ে পলাতক হন সোহাগ। ২০১৭ সালের ২৮শে ডিসেম্বর সোহাগকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।
রায় প্রকাশের পর সোহাগ তার ফুপাত ভাই হোসেনকে নকল সোহাগ সাজিয়ে ২০১৮ সালের ১লা জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে বলে। কিন্তু আদালত নকল সোহাগের জামিন নামঞ্জুর করে জেলে পাঠান। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাদকাসক্ত হোসেনকে মাসিক ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল হাজতে যেতে রাজি করান সোহাগ। এ সময় তাকে ২-৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও দেন সোহাগ।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গত বছর নকল সোহাগের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আদালত কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন চান। প্রতিবেদনে আসামি সোহাগ আর বর্তমানে হাজতে থাকা নকল সোহাগের অমিলের বিষয়টি উঠে আসে। গত আগস্ট থেকে আসল সোহাগের খোঁজে র্যাব-১০ ও সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা কাজ করে আসছিল। গ্রেফতার সোহাগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ২টি হত্যা মামলা, ২টি অস্ত্র মামলা ও ৬টি মাদক মামলাসহ সর্বমোট ১০টি মামলা রয়েছে। তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর মধ্যেই আসামি সোহাগ দেশ ত্যাগ করতে জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে দুবাইয়ের ভিসা সংগ্রহ করে। দেশ ত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় শনিবার করোনার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল মিডফোর্ড হাসপাতাল যান সোহাগ। সেখান থেকেই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আসল সোহাগকে গ্রেফতার করে র্যাব।
Leave a Reply